কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে ? বিস্তারিত জানুন

  • Home
  • Diabetes
  • কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে ? বিস্তারিত জানুন
কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে ? বিস্তারিত জানুন

ডায়াবেটিস এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করছে। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে গেলে এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেকেই জানেন না, দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে খাবারগুলো খাই, তার অনেকগুলোই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই জেনে নেওয়া প্রয়োজন, কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে এবং এগুলো কীভাবে এড়ানো যায়।

কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে?

কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে?

যেসব খাবার ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়াতে পারে, সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো –

১. চিনিযুক্ত পানীয়

চিনিযুক্ত পানীয়, যেমন কোমল পানীয়, ফলের রস, মিষ্টি চা বা কফি, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। এসব পানীয়তে থাকা অতিরিক্ত চিনি রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়ায়। বিশেষ করে, কোমল পানীয় বা সোডায় কোনো পুষ্টিগুণ নেই এবং এতে থাকা ক্যালোরি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ কারণে এ ধরনের পানীয় থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি।

পরামর্শ: তৃষ্ণা মেটানোর জন্য সেরা বিকল্প হলো পানি। চাইলে লেবুর রস বা পুদিনা পাতা দিয়ে পানির স্বাদ বাড়িয়ে নেওয়া যায়।

২. মিষ্টিজাতীয় খাবার

মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন চকলেট, মিষ্টি, কেক বা জ্যাম রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এগুলোতে সাধারণত উচ্চমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত চিনি থাকে, যা দেহে দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এ ধরনের খাবার অল্প সময়ের জন্য শক্তি জোগালেও, পরে এটি ক্লান্তি এবং ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে।

পরামর্শ: মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা থাকলে ডার্ক চকোলেট বা প্রাকৃতিক মধু খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে তা খুবই সীমিত পরিমাণে।

ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার

৩. ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার

ময়দা থেকে তৈরি খাবার, যেমন সাদা রুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট ইত্যাদি খুব দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়। এসব খাবারে ফাইবার কম থাকে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত রুটি বা পাউরুটিতে উচ্চমাত্রায় চিনি থাকে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

পরামর্শ: ময়দার পরিবর্তে লাল আটা, ওটস বা দানাদার শস্য দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন। এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়ায়।

৪. প্রক্রিয়াজাত মিষ্টান্ন

প্রক্রিয়াজাত মিষ্টান্ন, যেমন কুকিজ, ডোনাটস, এবং প্রিজারভেটিভ দিয়ে তৈরি খাবারে উচ্চমাত্রার চিনি ও চর্বি থাকে। এগুলো ওজন বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, এসব খাবারে থাকা প্রিজারভেটিভ এবং কৃত্রিম রঙ শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

পরামর্শ: ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর মিষ্টি, যেমন চিড়ার ক্ষীর বা নারকেলের নাড়ু, মাঝে মাঝে খেতে পারেন।

ভাজা-পোড়া খাবার

৫. ভাজা-পোড়া খাবার

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস বা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার শুধু ডায়াবেটিস নয়, হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। এসব খাবারে অতিরিক্ত তেল এবং ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। তাছাড়া, অতিরিক্ত চর্বি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায়।

পরামর্শ: বাড়িতে কম তেলে ভাজা খাবার, যেমন ওভেনে বেক করা স্ন্যাকস, খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৬. উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার

উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার, যেমন সাদা চালের ভাত, সাদা পাউরুটি এবং নুডলস, রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এসব খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি।

পরামর্শ: চালের পরিবর্তে লাল চাল বা ব্রাউন রাইস খেতে পারেন। এছাড়া, ভাতের পরিমাণ কমিয়ে বেশি পরিমাণে শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৭. প্রক্রিয়াজাত মাংস

প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, বেকন এবং হ্যাম উচ্চমাত্রার লবণ এবং ফ্যাটযুক্ত হয়। এই খাবারগুলো দেহের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। দীর্ঘদিন ধরে এসব খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

পরামর্শ: তাজা মাংস রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করুন। মাছ বা মুরগির মাংস স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত ফল এবং জুস

৮. প্রক্রিয়াজাত ফল এবং জুস

অনেকেই ফলের জুস স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন, কিন্তু প্রক্রিয়াজাত ফলের জুসে অতিরিক্ত চিনি থাকে। এমনকি, তাজা ফলের জুসেও প্রাকৃতিক আঁশ থাকে না, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়।

পরামর্শ: ফলের জুসের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ফল খান। এতে ফাইবার থাকে, যা শর্করার শোষণ ধীর করে।

৯. অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার

লবণ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। প্যাকেটজাত খাবারে লবণের মাত্রা সাধারণত অনেক বেশি থাকে।

পরামর্শ: রান্নায় লবণের ব্যবহার সীমিত রাখুন এবং লবণ ছাড়া খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক খাবার

যেসব খাবার ডায়াবেটিস মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে, সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো –

১. আঁশযুক্ত খাবার

আঁশযুক্ত খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আঁশ রক্তে শর্করার শোষণ প্রক্রিয়া ধীর করে, ফলে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে না। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে।

  • ফলমূল: আপেল, নাশপাতি, বেরি জাতীয় ফল (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি) আঁশে পরিপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক মিষ্টি শর্করাযুক্ত, যা ধীরে হজম হয়।
  • শাকসবজি: ব্রকলি, পালং শাক, গাজর এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি আঁশের ভালো উৎস।
  • ওটস: সকালের নাস্তায় ওটস খেলে এটি দীর্ঘ সময় ধরে শরীরকে শক্তি জোগায় এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • বাদাম: বাদাম যেমন- আখরোট, কাজু এবং আমন্ডে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও আঁশ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার

২. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না এবং শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।

  • মাছ: বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ যেমন- সালমন, ম্যাকারেল এবং সার্ডিনে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
  • ডিম: ডিম প্রোটিনের একটি সহজলভ্য উৎস। এটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে।
  • মুরগি: তেলে ভাজা বা মসলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে গ্রিল করা বা সিদ্ধ মুরগি খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
  • ডাল: মসুর, মুগ এবং ছোলার ডাল প্রোটিন ও আঁশের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। এটি ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় শক্তি সরবরাহ করে।

৩. কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার

কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার ধীরে হজম হয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে না। এই ধরনের খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত সাহায্য করে।

  • সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
  • মাশরুম: মাশরুমে ক্যালরি কম এবং পুষ্টিগুণ বেশি। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • লো-কার্ব খাবার: ফুলকপি, জুচিনি, কুমড়ো এবং অন্যান্য লো-কার্ব সবজি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

অন্যান্য উপকারী খাবার

অন্যান্য উপকারী খাবার

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু বিশেষ খাবার রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

  • দারুচিনি: দারুচিনির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • মেথি: মেথি দানার ভেষজ উপাদান ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
  • গ্রীন টি: গ্রীন টিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার ভূমিকা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। খাদ্যাভ্যাসে নিয়মিত পরিবর্তন আনতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ডায়েট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা যেমন- নিয়মিত শরীরচর্চা, সঠিক পরিমাণে পানি পান, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার

খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তবে এর জন্য সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কম GI যুক্ত খাবার বেছে নিন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন। আপনার জীবনধারায় ছোট ছোট ইতিবাচক পরিবর্তন এনে সুস্থ ও আনন্দময় জীবনযাপন নিশ্চিত করুন।

 

বিস্তারিত জানুন: ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় কি?

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

অবশ্যই, পুরো গমের ময়দায় কার্বোহাইড্রেট রয়েছে (প্রতি ১/৪ কাপ পরিবেশনে ২১.৫ গ্রাম), তবে এটি মিহি প্রক্রিয়াজাত নয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়। (এই ময়দার গ্লাইসেমিক সূচক মাত্র ৪৫।) পুরো গমের আটায় গমের দানাগুলি অক্ষত থাকে, যা তাদের প্রাকৃতিক আঁশ, বি ভিটামিন এবং প্রোটিন সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।

বেশিরভাগ সাধারণ নুডলস মিহি গমের আটা দিয়ে তৈরি, যা একটি সাধারণ কার্বোহাইড্রেট। এতে স্টার্চ থাকে, যা দ্রুত হজম হয়, এবং গ্লুকোজ, যা দ্রুত শোষিত হয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। ফলে নুডলসকে একটি উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

চাপাতিতে জটিল কার্বোহাইড্রেট যোগ করলে এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কমানো সম্ভব, যা ধীরে ধীরে হজম হতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ার ঝুঁকি কমায়।

ডায়াবেটিস শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে ডালিয়া, মাদাগাস্কার পেরিউইঙ্কল, কলার ফুল, হিবিস্কাস এবং প্রজাপতি মটর ফুলের মতো কিছু ফুলে প্রাকৃতিক যৌগ রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এগুলো ডায়াবেটিসের অগ্রগতি রোধ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত স্বাস্থ্য উপকারিতাও প্রদান করতে পারে।

img

Dr. Saiful Islam, PT, is a Consultant Physiotherapist with expertise in Orthopedics. He holds a BPT from Dhaka University, an MPT, and a Postgraduate Certification in Acupuncture from India, with specialized training in Ozone Therapy.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *