পূর্বের ব্লগে আমরা আলোচনা করেছি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়? এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়? ও ডায়াবেটিস কত হলে বিপদজনক। ডায়াবেটিস এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ যা সময়মতো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। কিন্তু অনেকেই জানেন না ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়। এই রোগে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি হয় এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে মৃত্যু ঘটতে পারে।
ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি ১৬.৭ মিলি.মোল/লি (৩০০ mg/dl) বা তার বেশি হয়, তবে তা মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এই মাত্রা অতিক্রম করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তবে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ইনসুলিনের অভাবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না নিলে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে ওঠানামা করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই জীবনহানির আশঙ্কা থাকে।
কেন বিপদজনক মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে শর্করার নিয়মিত পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই এই প্রশ্ন করেন, ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় বা কোন মাত্রায় এটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বেড়ে গেলে বা খুব বেশি কমে গেলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া
রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে গেলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বিভ্রান্তি, এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। এমনকি এটি খিঁচুনির কারণ হতে পারে, যা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া
যদি রক্তে শর্করার মাত্রা ৩০০ mg/dl এর বেশি হয়, তবে শরীরে জটিলতাগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই মাত্রা অতিক্রম করলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, বা কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
ডায়াবেটিস কত হলে বিপদজনক
ডায়াবেটিস কত হলে বিপদজনক হয়ে ওঠে, তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭ mmol/L বা এর বেশি হলে ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হয়। তবে এই মাত্রায় পৌঁছালেই রোগীকে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে, তা নয়।
ডায়াবেটিসের স্তর অনুযায়ী ঝুঁকি
যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের জন্য উপবাস অবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা ৬.৯ mmol/L (১২৫ mg/dL) এর নিচে থাকা উচিত। তবে প্রি-ডায়াবেটিসে এই মাত্রা কিছুটা বেশি হয়, যেমন:
- ফাস্টিং অবস্থায়: ৬.১ থেকে ৬.৯ mmol/L।
- খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে: ৭.৮ থেকে ১১.০ mmol/L।
যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিতভাবে ১৬.৭ mmol/L বা এর বেশি হয়, তখন ডায়াবেটিস মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এ অবস্থায় ইনসুলিন চিকিৎসা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তাই প্রশ্নটা উঠে আসে, ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ?
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে শর্করার স্বাস্থ্যকর মাত্রা হলো:
- খালি পেটে: ৩.৯ থেকে ৭.২ mmol/L (৭০ থেকে ১৩০ mg/dL)।
- খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর: ১০ mmol/L (১৮০ mg/dL)-এর নিচে।
এই সীমার বাইরে গেলে তা শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। তাই ডায়াবেটিস কত হলে বিপদজনক তা নির্ধারণে রক্ত পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত স্ক্রিনিং ও সতর্কতা
৪০ বছর বয়সের পর ওজনাধিক্য, পারিবারিক ইতিহাস বা ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য কারণ থাকলে নিয়মিত ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং করা উচিত। যেহেতু ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ তা সময়মতো না বুঝলে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
সকালে খালি পেটে এবং দিনের মধ্যে অন্তত ৬ বার রক্ত পরীক্ষা করলে শর্করার মাত্রা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক ডায়েট, ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস একটি গুরুতর বিষয় যা মায়ের এবং গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত, রক্তে চিনি বা গ্লুকোজের মাত্রা ১৪০ মিলিগ্রামের বেশি হলে এটি সতর্কতার সংকেত দেয়। বিশেষ করে, যদি আপনার উপবাসের প্লাজমা গ্লুকোজের মাত্রা 5.6mmol/L বা তার বেশি হয় অথবা ২-ঘন্টার প্লাজমা গ্লুকোজের মাত্রা 7.8mmol/L বা তার বেশি হয়, তবে সাধারণত এটি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে প্রসবের সময় জটিলতা, সন্তানের অতিরিক্ত ওজন হওয়া বা ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের চিনি নিয়মিত পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস কত কম হলে বিপদ
রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, আনাড়ি আচরণ, কথা বলতে সমস্যা, বিভ্রান্তি, দ্রুত হৃদস্পন্দন, ঘাম, অস্থিরতা, নার্ভাসনেস, ক্ষুধা, এমনকি চেতনা হ্রাস, খিঁচুনি বা মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ প্রতি লিটার ৪ মিলিমোলের (প্রতি ডেসিলিটারে ৭০ মিলিগ্রাম) নিচে নেমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে বলে ধরা হয়।
স্বাভাবিক রক্তে শর্করার মাত্রা ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকা উচিত। তবে, যদি রক্তে শর্করার মাত্রা ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার থেকে ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের মধ্যে থাকে, তাহলে তা প্রিডায়াবেটিসের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি, কারণ অতিরিক্ত কম বা বেশি উভয়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত রক্তে শর্করার পরীক্ষা করা এবং সঠিক জীবনযাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে চাইলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন:
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। ওজন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন।
- খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ: চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। শাকসবজি এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান।
- শারীরিক পরিশ্রম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- রক্ত পরীক্ষা: সকালে খালি পেটে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন। এতে জানা যাবে, ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় এবং কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হোন
অনেকেই রোগের জটিলতা বুঝতে না পেরে চিকিৎসা নিতে দেরি করেন। সচেতনতার অভাবে প্রায়শই এই প্রশ্ন ওঠে, ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়। তবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত মনিটরিং এবং জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডায়াবেটিসের জটিলতা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিন এবং আপনার শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন। জীবন বাঁচানোর জন্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবিটে চিকিৎসা কেন নিবেন?
আমাদের উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন নার্ভের ব্যথা, দুর্বলতা, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিক ফুট আলসার এবং রক্ত সঞ্চালনের সমস্যার সমাধানে অত্যন্ত কার্যকর। ইউরোপের আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন ব্যবহার করে আমরা ওজন গ্যাস থেরাপি, আকুপাংচার, ডায়াবেটিক ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক এনার্জি, পালস ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি এবং থেরাপিউটিক ব্যায়াম প্রোগ্রামের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি প্রদান করি। এই থেরাপিগুলো একসঙ্গে কাজ করে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাগুলো কমাতে এবং রোগীদের আবার সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করে।