ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীদের জন্য কিছু খাবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং সঠিক খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভুল খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস রোগীর স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য হুমকিস্বরূপ। ডায়াবেটিস রোগীদের নির্দিষ্ট কিছু খাবার এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, কারণ এসব খাবার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। ডায়াবেটিস একটি প্রচলিত রোগ, যা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি দেখা দিতে পারে। তবে অনেকেই এই রোগকে যথাযথ গুরুত্ব দেন না। কিন্তু ডায়াবেটিস হলে জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা অপরিহার্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেকেই সেই পরিবর্তনগুলো করেন না। আমাদের আগের পোস্টে আমরা ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি সম্পর্কিত লক্ষণ, পরীক্ষা, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে যদি আপনি সুস্থ থাকতে চান, তবে আপনার জন্য যা নিষিদ্ধ তা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য না হলেও, নিয়ম মেনে চললে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিন্তু অনিয়মিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে আজ প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একজন ডায়াবেটিস রোগী দেখা যায়। তাই যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে কী খাবেন এবং কী খাবেন না এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখা জরুরি। বিশেষ করে নিষিদ্ধ খাবারগুলোর তালিকা জেনে রাখুন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে খাবার নিয়ে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা ছাড়া আর উপায় থাকে না।
শুধু কী খাচ্ছেন তা নয়, কখন খাচ্ছেন সেটাও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ পেট খালি থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। নিয়মিত শরীরচর্চা, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন, এবং বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা। এসব নিয়ম মানলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। খাবার গ্রহণে অনিয়ম বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে, তাই নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
উন্নতমানের ফিজিওথেরাপি সেবার জন্য ডায়াবিটে আজই আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা কল করুন +8801988899936 নম্বরে।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবারে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার এবং কিছু খাবার পুরোপুরি এড়ানো উচিত। কারণ, এই খাবারগুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় এবং আরও নানা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থ থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক ও সুষম খাদ্যতালিকা মেনে চলা। মাখন, ঘি, মিষ্টি, চিনি, মধু, গুড়, লজেন্স, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, ফলের রস, নরম পানীয়, অ্যালকোহল, তেলেভাজা খাবার। এগুলোতে প্রচুর চিনি ও চর্বি থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এসব খাবার এড়ানোই ভালো। এর বদলে সবজি, ফল, পুরো শস্য, মাছ এবং তেল ছাড়া মুরগি খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেলে ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বোঝার সুবিধার্থে নিচে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা দেওয়া হলোঃ
১| চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার
চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধরনের খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিসের জটিলতা বাড়ায়। এটি শুধু ডায়াবেটিস নয়, বরং হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং স্নায়ুর ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়ায়। অতিরিক্ত চিনি খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে, কারণ এসব খাবারে প্রোটিন ও ফাইবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান কম থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনি ও চিনি যুক্ত খাবার যেমন চকলেট, মিষ্টি, কেক, বিস্কুট ইত্যাদি সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কঠিন করে তোলে। দীর্ঘদিন ধরে এই চাপ প্যানক্রিয়াসের ওপর পড়লে এটি ক্লান্ত হয়ে যায় এবং ইনসুলিনের অভাব দেখা দিতে পারে। এতে করে ওজনও বাড়ে, যা ডায়াবেটিসের জটিলতা আরও বাড়ায়।
চিনির পরিবর্তে, ডায়াবেটিস রোগীরা স্বাস্থ্যকর বিকল্প খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। ফল, সবজি এবং পুরো শস্যে প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকে যা শরীরের জন্য ভালো এবং এতে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়তে সাহায্য করে। ডায়েটেটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করে এই খাবারগুলো মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
২| চর্বিযুক্ত / তেলভাজা খাবার
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চর্বিযুক্ত ও তেলেভাজা খাবার এড়ানো খুবই জরুরি। যদিও আমাদের শরীরের জন্য সামান্য পরিমাণ চর্বি দরকার, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ওজন বাড়ে এবং আরও অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে বেশি চর্বি খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তোলে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া, বেশি চর্বি খাওয়া হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।
চর্বিযুক্ত খাবার থেকে অনেক বেশি ক্যালরি পাওয়া যায়। এক গ্রাম চর্বিতে প্রায় ৯ ক্যালরি থাকে, যা অন্যান্য পুষ্টির তুলনায় অনেক বেশি। কম পরিমাণে খেলেও, এই খাবারগুলো শরীরে প্রচুর ক্যালরি যোগ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই অতিরিক্ত ক্যালরি ওজন বাড়ায় এবং ইনসুলিন রোধ সৃষ্টি করতে পারে। ইনসুলিন রোধ হলে, শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারায়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে, সব চর্বিই ক্ষতিকর নয়। অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো এবং বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরের জন্য উপকারী। এই ধরনের চর্বি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের পরিশোধিত চর্বি ও তেলেভাজা খাবার যেমন বাটার, ঘি, বিস্কুট এড়িয়ে, স্বাস্থ্যকর চর্বির দিকে ঝোঁক রাখা উচিত।
৩| দুধের তৈরি খাবার
ডায়াবেটিস রোগীদের দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার সময় কিছুটা সতর্ক থাকা দরকার। যদিও দুধে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে, অনেক দুগ্ধজাত খাবারে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এই ফ্যাট ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তবে, সব ধরনের দুগ্ধজাত খাবারই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয়। কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো হতে পারে। সাধারণত দিনে এক গ্লাস কম চর্বিযুক্ত দুধ খাওয়া নিরাপদ। যদি দুধের স্বাদ পছন্দ না হয়, তাহলে তাতে অল্প পরিমাণে দারুচিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে এবং দুধের স্বাদও বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন দুগ্ধজাত খাবার কতটুকু খাওয়া উচিত, তা নিয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, প্রতিটি রোগীর শারীরিক অবস্থা আলাদা, তাই তাদের খাদ্যতালিকাও আলাদা হওয়া উচিত। ডাক্তার রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে সবচেয়ে উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারেন।
উন্নতমানের ফিজিওথেরাপি সেবার জন্য ডায়াবিটে আজই আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা কল করুন +8801988899936 নম্বরে।
৪| লবণ
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য লবণ গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশি লবণ খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। উচ্চ রক্তচাপ আবার হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লবণের পরিমাণ কমিয়ে আনা খুবই জরুরি।
কিছু গবেষণা বলছে, সাধারণ লবণের চেয়ে বিট লবণ ডায়াবেটিস এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বেশি কার্যকর হতে পারে। বিট লবণে থাকা নাইট্রেট রক্তচাপ কমাতে ও ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।
বিট লবণের কিছু সম্ভাব্য উপকারিতা থাকলেও, ডায়াবেটিস রোগীদের লবণের ধরন ও পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে লবণের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন।
৫| শুকনো ফল
শুকনো ফল সাধারণত স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ, শুকনো ফলে চিনির পরিমাণ খুবই বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ৫০ গ্রাম শুকনো খেজুরে প্রায় ২৫ গ্রাম চিনি থাকে, একই পরিমাণ কিশমিশেও প্রায় ২৫ গ্রাম চিনি থাকে। এই বেশি চিনি দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি করে।
শুকনো ফলে ফাইবার থাকলেও, এগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না। কারণ, শুকনো ফলের চিনি খুব দ্রুত শরীরে শোষিত হয়, যার ফলে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। এছাড়া, শুকনো ফলের ক্যালরি মূল্যও অনেক বেশি, যা ওজন বাড়াতে পারে।
তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের শুকনো ফল, বিশেষ করে মিষ্টি ফল যেমন খেজুর বা কিশমিশ, এড়ানোই ভালো। যদি খুব ইচ্ছা হয়, তাহলে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে শুকনো ফল অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে এবং খুব সীমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
৬| প্রক্রিয়াজাত মাংস
প্রক্রিয়াজাত মাংস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এতে অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে যা তাজা মাংসে নেই। এই রাসায়নিক উপাদান শরীরে নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাছাড়া, প্রক্রিয়াজাত মাংসে সোডিয়ামের পরিমাণও বেশি থাকে, যা রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ধরনের মাংস তৈরির সময় অনেক পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।
এ কারণেই প্রক্রিয়াজাত মাংসে তাজা মাংসের তুলনায় পুষ্টি অনেক কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রক্রিয়াজাত মাংসকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী খাবার হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই সুস্থ থাকতে প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, হ্যাম, বেকন, সলামি এবং মাংসের কেক এড়ানোই ভালো।
এর পরিবর্তে, তাজা মাংস, মাছ, মুরগি, শাকসবজি, ফল, বাদাম এবং বীজ খাওয়া উচিত। এই খাবারগুলোতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে এবং এগুলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সহায়ক। কোন খাবার আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, তা জানতে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও এটি নিয়ন্ত্রণে করণীয় কি? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি পড়ে জেনে নিন।
৭| দুধ চা ও কফি
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য দুধ এবং চিনি দিয়ে চা বা কফি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই ধরনের পানীয় দ্রুত রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া, ক্যাফেইন হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে রক্তচাপও প্রভাবিত করতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনে অনেকেই অভ্যাসবশত দিনে কয়েকবার চা বা কফি পান করেন। তবে, ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য দিনে দুই কাপের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অতিরিক্ত ক্যাফেইন থেকে অস্থিরতা, ঘুমের সমস্যা, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চা ও কফির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আয়ুর্বেদিক চা বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে। অনেক আয়ুর্বেদিক চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্য সুবিধাও দেয়। তবে, কোন ধরনের চা আপনার জন্য সঠিক, তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৮| কিসমিস
কিসমিস অনেকের কাছে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খানিকটা সমস্যাজনক হতে পারে। কারণ কিসমিসে চিনির পরিমাণ খুবই বেশি, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে ওঠে।
কিসমিসের আরেকটি দিক হলো এতে প্রচুর ক্যালরি থাকে, যা অতিরিক্ত ওজন বাড়ানোর কারণ হতে পারে। ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ আরও জটিল হয়ে পড়ে। কিছু মানুষের জন্য কিসমিস হজমেও সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
যদিও কিসমিসে কিছু পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে, তবুও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সুস্থ থাকতে খাবারের বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। এজন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা উচিত, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে এবং জীবনকে সহজ করবে।
ডায়াবেটিস রোগীরা খাবারের ক্ষেত্রে কী কী বিশেষ খেয়াল রাখাতে পারে?
১) ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাবারের সময়ের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হওয়া খুব জরুরি। নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়। যারা খাবারের আগে ইনসুলিন ব্যবহার করেন, তাদের প্রতিদিনের রুটিনে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সময় মেনে খাওয়ার এই অভ্যাসটি শরীরের ওপর অনেকটাই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
২) খাবারের নিয়ম মানার পাশাপাশি শরীরচর্চাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারী ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই; প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটলেই অনেক উপকার পাওয়া যায়। হাঁটাচলা বা হালকা ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে ব্যস্ত জীবনে একটু সময় বের করে নিয়মিত হাঁটাচলার অভ্যাস করলে ডায়াবেটিসের মতো রোগকেও সহজে মোকাবিলা করা যায়।
৩) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, শরীরের অবস্থা কেমন এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। এটি একদিকে যেমন শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতেও সহায়ক হয়।
ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়? এটি হলে কি লক্ষণ দেখা যায়? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি পড়ে জেনে নিন।
কোন কোন খাবার খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি বিপদ হতে পারে?
ডায়াবেটিস রোগীদের মাখন, ঘি, মিষ্টি এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ। এসব খাবার, যেমন চিনি, মধু, গুড়, লজেন্স, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, ফলের রস, সফট ড্রিঙ্ক, অ্যালকোহল, তেলেভাজা, শিঙাড়া, কচুরি, চপ এবং কাটলেট দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, সুস্থ থাকতে এগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।
পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ডাবল টোনড দুধ এবং কম ফ্যাটযুক্ত বিস্কুট (যেমন ক্রিমক্র্যাকার, মারি, থিন অ্যারারুট) খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন মুসাম্বি, কমলা, পাকা পেঁপে এবং আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কার্বোহাইড্রেট হিসেবে পরিমিত পরিমাণে ভাত, রুটি, সুজি, চিঁড়ে, কর্নফ্লেক্স, মুড়ি, এবং ব্রাউন ব্রেড খাওয়া যেতে পারে, তবে পরিমাণে নজর রাখা জরুরি।
সবজি হিসেবে রাঙা আলু, কচু, কাঁচা কলা, মুলো, গাজর, কুমড়ো ও এঁচোড় সীমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে পটল, চিচিঙ্গা, চালকুমড়ো, করলা, পেঁপে, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, বাঁধাকপি, লাউ, ফুলকপি, শসা, থোর, মোচা, ক্যাপসিকাম, টমেটো, পেঁয়াজ, আদা, শাক, বিনস, ডুমুর, শিম, এবং সজনে ডাঁটা ডায়েটে বেশি করে রাখা যায়। এই খাবারগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
ডায়াবেটিসে ঢেঁড়স এর উপকারিতা, গুনাগুন ও বৈজ্ঞানিক নাম কি? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি পড়ে জেনে নিন।
ডায়াবেটিস ডায়েটের মূলনীতি
সকালের নাস্তা ভারী হওয়া উচিত, দুপুরের খাবার মাঝারি পরিমাণে এবং রাতের খাবার হালকা। কিন্তু অনেক ডায়াবেটিস রোগী সকালের খাবার এড়িয়ে যান আর রাতে বেশি খাবার খেতে পছন্দ করেন। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে বা কমে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে, যা বিপজ্জনক হতে পারে। দুই বেলার খাবারের মাঝে স্বাস্থ্যকর কিছু যেমন শসা, টক দই, সেদ্ধ ডিম, ছোলা, ছাতু, বা মাখানা খেতে পারেন। এই খাবারগুলোতে ফাইবার, প্রোটিন, এবং পুষ্টি থাকে, যা ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় এবং অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে।
এছাড়া, এই খাবারগুলো সহজে হজম হয় এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তবে, আপনার জন্য কোন খাবার সবচেয়ে ভালো, তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র
Medical News Today – Foods and drinks to avoid with diabetes
WebMD – Best and Worst Foods for Diabetes
Byram Health Care – What Foods to Avoid with Diabetes
Cleveland Clinic – The Worst and Best Foods if You Have Diabetes
সাধারণ জিজ্ঞাসা
ডায়াবেটিস হলে কি খাবেন না?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরি। কিছু খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা তৈরি করতে পারে। তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু খাবার এড়ানো উচিত, যেমন সাদা চাল, ময়দা, পাস্তা, মিষ্টি, চকলেট, কেক, ফাস্ট ফুড, মিষ্টি ফলের রস, এবং বেকারি পণ্য। এসব খাবারে চিনি ও চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
এর বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া উচিত, যেমন সবুজ শাকসবজি, ফল, পুরো শস্য, চর্বিহীন বা কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, মাছ এবং মাংস। এই খাবারগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
তবে, কোন খাবারগুলো আপনার জন্য সঠিক এবং কোনগুলো এড়ানো উচিত, তা জানতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কোন খাবার খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়?
অনেকেই মনে করেন, কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবার খেলেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়। তবে, এটি আসলে একটি জটিল রোগ যা বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। যদিও কিছু খাবার বেশি পরিমাণে খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
সুগারযুক্ত ফিজি ও এনার্জি ড্রিংক, সাদা রুটি, সাদা ভাত, চিনিযুক্ত প্রাতঃরাশের সিরিয়াল, এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন বেকন, হ্যাম, সসেজ, শুয়োরের মাংস, গরুর মাংস, এবং ভেড়ার মাংস) - এসব খাবারে প্রচুর চিনি, অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট থাকে। এ ধরনের খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
কাঁঠাল খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁঠাল খাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়। কাঁঠালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) মাঝারি মানের, তাই এটি রক্তে শর্করার মাত্রা খুব দ্রুত বাড়ায় না। এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা শরীরের শর্করা শোষণের গতি কমিয়ে দেয় এবং শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক। তবে, কাঁঠালে কিছু চিনি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের কাঁঠাল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার আপনার জন্য কাঁঠাল খাওয়ার পরিমাণ ও সময় নির্ধারণে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবেন।
ডায়াবেটিস রোগীর আম খাওয়া যাবে কি?
অবশ্যই, ডায়াবেটিস রোগীরাও আম খেতে পারেন, তবে একটু পরিমিতিতে খাওয়াই ভালো। পাকা মিষ্টি আমে বেশ ভালো পরিমাণে চিনি থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তবে, আমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, খনিজ, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম, অর্থাৎ একটি ছোট আম বা অর্ধেক মাঝারি আম উপভোগ করতে পারেন। তবে, আম খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো, কারণ প্রত্যেকের শরীরের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে।
পাস্তা খেলে কি ডায়াবেটিস হয়?
শুধু পাস্তা খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস হয়, এমনটা বলা সঠিক নয়। ডায়াবেটিস আসলে একটি জটিল রোগ, যার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। তবে, পাস্তার ধরণ, এর পরিমাণ এবং এর সাথে যা খাওয়া হচ্ছে, সেসবের ওপর নির্ভর করে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে। সাদা পাস্তায় যেখানে ফাইবার কম, সেখানে গোটা শস্যের পাস্তায় ফাইবার বেশি থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গোটা শস্যের পাস্তা তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর হতে পারে। তবে, পাস্তা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি।
ডায়াবেটিসে কোন কোন ফল খাওয়া উচিত?
অনেকে মনে করেন, শুধু একটি নির্দিষ্ট খাবার খেলেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়, কিন্তু এটি আসলে বেশ জটিল একটি রোগ যা বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। কিছু খাবার অবশ্য এমন আছে, যেগুলি বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
যেমন, সুগারযুক্ত ফিজি ও এনার্জি ড্রিঙ্ক, সাদা রুটি, সাদা ভাত, চিনিযুক্ত প্রাতঃরাশের সিরিয়াল, আর প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন বেকন, হ্যাম, সসেজ)—এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে চিনি, অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই ধরনের খাবার দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় এবং শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের প্রবণতা বাড়াতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।