জবা ফুলের উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ও রস খেলে কি হয়?

  • Home
  • Diabetes
  • জবা ফুলের উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ও রস খেলে কি হয়?
জবা ফুলের উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ও রস খেলে কি হয়?

আজকের দিনে ডায়াবেটিস একটি বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেবে পরিচিত। এই রোগের সঙ্গে লড়াই করতে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদানের দিকে ঝুঁকছেন। এর মধ্যে জবা ফুল অন্যতম। এই রঙিন ও সুন্দর ফুলটি শুধু দেখতে সুন্দরই নয়, এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গুণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জবা ফুলের উপকারিতা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানব, জবা ফুলের উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এবং এর রস খাওয়ার ফলে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে।

জবা ফুলের উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ও রস খেলে কি হয়?

জবা ফুলের উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য

জবা ফুল, যা ইংরেজিতে হিবিস্কাস নামে পরিচিত, আমাদের চারপাশে সহজেই পাওয়া যায় এবং এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জবা ফুল বিশেষভাবে উপকারী। এই ফুলে থাকা নানা উপাদান শুধু রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণেই নয়, বরং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা প্রতিরোধেও সাহায্য করে। চলুন দেখি জবা ফুলের কী কী উপকারিতা রয়েছে এবং এটি কীভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জবা ফুল অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জবা ফুলে থাকা বিশেষ উপাদান ফেরুলিক অ্যাসিড ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই ফুলের চা নিয়মিত পান করলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তা উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এই চা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে।

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে

ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে অনেকেরই ওজন বাড়ার সমস্যা থাকে। জবা ফুলের চা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং ক্ষুধা কমায়, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এছাড়া, এটি শরীরে চর্বি কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

ডায়াবেটিসের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা অনেকেরই দেখা যায়। জবা ফুলের চা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এই চা নিয়মিত খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৪. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। জবা ফুলের চা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়িয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

৫. লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়

ডায়াবেটিস রোগীদের লিভারের কার্যকারিতা অনেক সময় দুর্বল হতে পারে। জবা ফুলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এটি লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি ফ্যাটি লিভার এবং অন্যান্য লিভারের সমস্যাগুলোও প্রতিরোধে সহায়ক।

৬. প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে নানা ধরনের প্রদাহ দেখা দিতে পারে। জবা ফুলের চা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। এতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে, যা বিভিন্ন ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।

৭. ত্বকের যত্নে সাহায্য করে

ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ত্বকের সমস্যা একটি সাধারণ ব্যাপার। শুকনো ত্বক, চুলকানি বা প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। জবা ফুলের তেল এবং পেস্ট ত্বকের জন্য ভালো। এতে থাকা অ্যান্টি-এজিং উপাদান ত্বকের বলিরেখা কমায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। এ ছাড়া এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাহায্য করে।

৮. কিডনির সমস্যায় উপকারী

ডায়াবেটিসে কিডনি সমস্যা (নেফ্রোপ্যাথি) একটি বড় ঝুঁকি। জবা ফুল কিডনির জন্য উপকারী কারণ এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে এবং কিডনি পাথর কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে যারা কিডনিতে পাথর জমার সমস্যায় ভুগছেন, তারা জবা ফুলের চা থেকে উপকার পেতে পারেন।

৯. মানসিক চাপ ও অবসাদ কমাতে সাহায্য করে

ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়ই মানসিক চাপ ও উদ্বেগের সম্মুখীন হন, যা শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জবা ফুলের চা মানসিক চাপ কমায় এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে। এতে থাকা উপকারি ভিটামিন এবং মিনারেল স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে এবং মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে।

১০. পিরিয়ডের সমস্যা সমাধানে সহায়ক

ডায়াবেটিসের কারণে নারীদের মাঝে হরমোনজনিত সমস্যা হতে পারে, যা পিরিয়ডের অনিয়ম এবং পিরিয়ডের সময় ব্যথার কারণ হতে পারে। জবা ফুলের চা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সহায়ক।

জবা ফুলের উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ও রস খেলে কি হয়?

কীভাবে বানাবেন জবা ফুলের চা?

জবা ফুলের চা বানানো খুবই সহজ এবং এটি আপনি বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন। ৩-৪টি তাজা জবা ফুল নিয়ে তার পাপড়িগুলো ছিঁড়ে নিন। একটি পাত্রে ২ কাপ পানি নিয়ে ফুটিয়ে নিন এবং তাতে জবা ফুলের পাপড়ি দিন। ৫-৭ মিনিট ভালো করে ফুটানোর পর চা ছেঁকে নিন। এর মধ্যে ১ চামচ মধু এবং কিছু লেবুর রস যোগ করে দিন। ব্যস, হয়ে গেলো আপনার স্বাস্থ্যকর জবা ফুলের চা প্রস্তুত!

জবা ফুলের রস খেলে কি হয়?

জবা ফুলের রস প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই ফুলের রসে বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্য উপকারী গুণ রয়েছে। এটি সাধারণত ঠান্ডা-গরম লাগা কমাতে, শরীরকে শীতল রাখতে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, জবা ফুলের রসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এটি সবার শরীরের জন্য উপকারী নাও হতে পারে, তাই নিয়মিত বা বেশি পরিমাণে গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

জবা ফুলের উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ও রস খেলে কি হয়?

জবা ফুলের উপকারিতা চুলের জন্য

জবা গাছের ফুল আর পাতা দুটোই চুলের জন্য বেশ ভালো। এটি চুল পড়া কমায়, চুলের গোঁড়া মজবুত করে, আর মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল ভালো করে। জবা ফুলে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড চুলের কেরাটিন প্রোটিন বাড়ায়, যা চুলের প্রাকৃতিক ঝলক ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু কীভাবে জবা ফুল ও পাতা ব্যবহার করবেন?

অনেকেই চুলের যত্নে জবা ফুলের তেল ব্যবহার করে থাকেন। আপনিও চাইলে নারকেল তেলের সঙ্গে জবা ফুলের পাপড়ি বেটে ফুটিয়ে নিতে পারেন। শ্যাম্পুর আগে এই তেল চুলে লাগালে তা ঘন হতে শুরু করবে।

আমন্ড তেলের সঙ্গে জবা ফুলের পাপড়ি মিশিয়ে এক শিশিতে ভরে ১৫ দিন রোদে রেখে দিন। এরপর এটি চুলে মাখতে পারেন। এছাড়া, জবা ফুল আর পাতা একসঙ্গে বেটে নারকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে তেল তৈরি করলেও চুলের অনেক সমস্যা দূর হয়।

আরও একটা ভালো উপায় হলো অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে জবা ফুলের পাপড়ি বেটে হেয়ার মাস্ক বানানো। গোসলের আগে ২০ মিনিট এটি চুলে লাগিয়ে রাখলে চুল পড়া কমবে।

সাদা চুলের সমস্যার জন্যও জবা ফুল কাজে আসে। জবা ফুলের পাপড়ি জলে ফুটিয়ে সেই জল স্প্রে বোতলে ভরে নিন। প্রতিদিন চুলে স্প্রে করলে ধীরে ধীরে চুল আবার কালো হতে শুরু করবে।

বিস্তারিত জানুন: ডায়াবেটিস মেশিন ব্যবহারের নিয়ম, দাম এবং কোথায় পাওয়া যায়

বিস্তারিত জানুন: ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি এর লক্ষণ,ঔষধ এবং চিকিৎসা কি?

বিস্তারিত জানুন: ডায়াবেটিসে মেথি খাওয়ার নিয়ম, মেথির উপকারিতা জেনে নিন!!

 

তথ্যসূত্র

National Library of Medicine — Hibiscus sabdariffa in Diabetes Prevention and Treatment—Does It Work? An Evidence-Based Review

Medical News Today — Hibiscus tea benefits and nutrition 

Healthline — 8 Benefits of Hibiscus

Jiva — Benefits of Hibiscus in Diabetes, High Cholesterol & Skin Problems

সাধারণ জিজ্ঞাসা

জবা ফুলে ফেরুলিক অ্যাসিড নামক একটি পলিফেনল থাকে, যা ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

জবা ফুলের পাতা আর মধু চুলের জন্য খুবই ভালো। এগুলো চুল পড়া কমায় আর চুলকে সিল্কি ও মসৃণ করে। এছাড়া, কালোকেহুতে পাতা, তেলা কচুলে পাতা, খুদে মানিক, জবা পাতা, মেহেদী পাতা তেল চুলের যত্নে বেশ কার্যকর।

img

Dr. Saiful Islam, PT, is a Consultant Physiotherapist with expertise in Orthopedics. He holds a BPT from Dhaka University, an MPT, and a Postgraduate Certification in Acupuncture from India, with specialized training in Ozone Therapy.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *