পুরুষের ডায়াবেটিস হলে কি সন্তান হয়? শুক্রানু কাউন্ট কত? এই প্রশ্নটি অনেক পুরুষের মনেই জাগে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস শুধু রক্তের শর্করা মাত্রা বাড়িয়ে দেয় না, এটি পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। আজকে এ সকল ব্যাপারে বিস্তারিতও আলোচনা করবো।
পুরুষের ডায়াবেটিস হলে কি সন্তান হয়?
পুরুষের ডায়াবেটিস থাকলে সাধারণত সরাসরি সন্তান জন্মদানে সমস্যা হয় না, তবে দীর্ঘমেয়াদে কিছু শারীরিক পরিবর্তন হতে পারে যা সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু এবং রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে যৌন ক্ষমতা কমে যায়, ফলে ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা যৌন উত্তেজনা ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এর পাশাপাশি, বীর্য উৎপাদন এবং মুক্তির প্রক্রিয়ায়ও সমস্যা হতে পারে, যা সন্তান ধারণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে পুরুষদের মধ্যে লিবিডো বা যৌন ইচ্ছাও কমে যেতে পারে, কারণ মস্তিষ্কের কিছু অংশে গ্লুকোজের ঘাটতি হয়, যা ক্লান্তি এবং দুর্বলতার কারণ হতে পারে। অনেক পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের অভাব দেখা দেয়, যা প্রজনন ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি থাকলে শুক্রাণুর মানও কমে যেতে পারে, যা সন্তান ধারণের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। এজন্য ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে হাইপোগোনাডিজম বা টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি একটি সাধারণ সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণে যৌন জীবন এবং সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।
পুরুষের শুক্রানু কাউন্ট কত?
শুক্রানু কাউন্ট মানে হলো পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কেমন। শুক্রানু কাউন্ট জানার জন্য একটি পরীক্ষা করা হয়, যা আমাদের শরীরের উর্বরতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। স্বাভাবিক শুক্রাণুর সংখ্যা প্রতি মিলিলিটারে ১৫-২০০ মিলিয়ন হতে পারে। এছাড়া শুক্রাণুর গতি, আকৃতি এবং মোট পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রাণুগুলো সঠিকভাবে চলা উচিত, এবং এদের অন্তত ৪০% এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকা দরকার। শুক্রাণুর আকৃতিও ঠিকঠাক থাকা দরকার, সাধারণত ৪% বা তার বেশি শুক্রাণু সুস্থ দেখায়। বীর্যের মোট পরিমাণ সাধারণত ১.৫-৫ মিলিলিটার হওয়া উচিত। শুক্রাণুর শক্তি পেতে ফ্রুক্টোজ দরকার হয়, এবং পিএইচ লেভেল দেখে সংক্রমণ আছে কি না, সেটাও বোঝা যায়।
ছেলেদের ডায়াবেটিস হলে কি বাচ্চা হয়?
ডায়াবেটিস পুরুষদের উর্বরতা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হতে পারে, যা সন্তান ধারণে সমস্যা তৈরি করে। এটি শুক্রাণুর মান কমিয়ে দেয় এবং ডিএনএ ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ভ্রূণের বিকাশে সমস্যা হতে পারে। তবে, ডায়াবেটিস থাকলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে বাবা হওয়া সম্ভব। এজন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি।
পুরুষের কি সমস্যা থাকলে বাচ্চা হয় না?
জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ফজল নাসের বলছেন, তার অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, পুরুষরা বন্ধ্যত্বের সমস্যার জন্য অনেক দেরিতে চিকিৎসকের কাছে আসেন। কারণ, সাধারণত সন্তান না হলে প্রথমে স্ত্রীকেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি জানিয়েছেন, পুরুষদের বন্ধ্যত্বের কিছু প্রধান কারণ রয়েছে।
- এজোস্পার্মিয়া মানে বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু না থাকা।
- শুক্রাণুর পথ বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যা হয়, তাই শুক্রাণু বের হয় না।
- অণ্ডকোষ যদি শুক্রাণু তৈরি না করে, তাহলে শুক্রাণু পাওয়া যায় না।
- কখনো শুক্রাণু থাকে, কিন্তু পরিমাণ কম হয়।
- শুক্রাণুর পরিমাণ ঠিক থাকলেও, মান ভালো না হলে ডিম্বাণুকে ফার্টিলাইজ করতে পারে না।
- শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনও থাকতে হবে।
- প্রজনন অঙ্গে আঘাত, অস্ত্রোপচার, যক্ষ্মা, এবং ডায়াবেটিস শুক্রাণুর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- ছোটবেলায় মাম্পস এবং চুল গজানোর ওষুধও সন্তান ধারণের ক্ষমতায় বাধা দিতে পারে।
ডায়াবেটিস এবং পুরুষের উর্বরতা:
- টাইপ 1 ডায়াবেটিস শুক্রাণুর ডিএনএ ক্ষতি করে, যা প্রজনন ক্ষমতায় সমস্যা তৈরি করে।
- টাইপ 2 ডায়াবেটিস শুক্রাণুর মান এবং গতি কমিয়ে দেয়, এবং শুক্রাণুর ডিএনএ ক্ষতি করে।
ডায়াবেটিস হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায়?
ডায়াবেটিস নিয়ে গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া নিঃসন্দেহে একটি সাহসী এবং বিশেষ দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। মা হওয়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ডায়াবেটিসের কারণে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন। তবে সঠিক যত্ন ও পরিকল্পনার মাধ্যমে মা হওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
গর্ভধারণের আগে পরিকল্পনা করলে আপনি এবং আপনার চিকিৎসক একসঙ্গে কাজ করে একটি স্বাস্থ্যকর পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে আপনার ইনসুলিন বা ওষুধের ডোজ সমন্বয় করা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা কেবল মায়ের জন্যই নয়, শিশুর জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উচ্চ শর্করা শিশুর ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন উচ্চ ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করা বা শিশুর জন্মের পর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি।
মায়ের মানসিক চাপ ও উদ্বেগও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সমর্থন এই সময়টাতে খুবই প্রয়োজনীয়। প্রতিটি ছোট বিজয় যেমন শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত চেকআপে ভালো রিপোর্ট পাওয়া – এগুলো গর্ভধারণকে ইতিবাচক ও আনন্দময় করে তোলে।
বিস্তারিত জানুন: ডায়াবেটিস কি?
বিস্তারিত জানুন: ডায়াবেটিস ফুট আলসার
বিস্তারিত জানুন: ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি
তথ্যসূত্র
National Library of Medicine – The effects of diabetes on male fertility and epigenetic regulation during spermatogenesis
Life – What is the relationship between diabetes and male fertility?
Molecular Medicine – Diabetes-induced male infertility: potential mechanisms and treatment options
Male Fertility & Sexual Medicine Specialists – How Does Diabetes Affect Male Fertility?
Andrology Center – Effect of diabetes on Male fertility
SHREE IVF CLINIC – Can Diabetes Cause Infertility in Males?
Your Fertility – High blood sugar and male infertility
সাধারণ জিজ্ঞাসা
ডায়াবেটিস হলে পুরুষ কি গর্ভবতী হতে পারে?
ডায়াবেটিস একটি গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে, এটি উর্বরতার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে—একজন মহিলাকে গর্ভধারণে সহায়তা করার ক্ষমতা হ্রাস করে। এর মূল কারণ হলো রক্তে উচ্চ গ্লুকোজের মাত্রা। পুরুষদের যৌন এবং উর্বরতা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি প্রায়ই বড় ধরনের মানসিক প্রভাব ফেলে।
স্বামী থেকে স্ত্রীর মধ্যে কি ডায়াবেটিস হয়?
গবেষকরা দেখেছেন যে, যদি কোনো ব্যক্তির স্ত্রীর টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকে, তবে তার নিজস্ব ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায়। মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি হেলথ সেন্টার (MUHC) এর একটি দল বেশ কয়েকটি গবেষণার সম্মিলিত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রমাণ পেয়েছে যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি পরস্পরের উপর প্রভাব ফেলে।
ডায়াবেটিস রোগীর সবচেয়ে বেশি ইনফেকশন কোনটি?
সবচেয়ে সাধারণ সংক্রমণস্থল হলো ত্বক ও মূত্রনালী। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে স্ট্যাফাইলোকক্কাল ফলিকুলাইটিস, ত্বকের পৃষ্ঠীয় ছত্রাক সংক্রমণ, সেলুলাইটিস, ইরিসিপেলাস এবং মুখ বা যৌনাঙ্গের ক্যান্ডিডা সংক্রমণের হার বেশি থাকে।